শামিমা ও নিলয়ের এক দুঃখভারাক্রান্ত প্রেমকাহিনি
ঢাকার এক পুরনো অলিগলিতে বেড়ে ওঠা শামিমা আর নিলয়। পাশের বাড়িতে থাকত দু’জন। শৈশব থেকেই ছিল একসাথে বেড়ে ওঠা, খেলা, পড়া, আর স্বপ্ন দেখা। কখন যে বন্ধুত্ব প্রেমে পরিণত হয়েছিল, কেউ জানত না। শুধু জানত, ওদের চোখে একে অপরের জন্য এক অদ্ভুত ভালোবাসা ছিল, যা সময়ের সাথে আরও গভীর হয়েছিল।
শামিমা ছিল শান্ত স্বভাবের, চোখে স্বপ্নভরা। আর নিলয়, সদা হাস্যোজ্জ্বল, কিন্তু ভেতরে ছিল গভীরতা। ওদের প্রেমটা যেন সিনেমার মতো ছিল—একসাথে বৃষ্টিতে ভিজে যাওয়া, ছাদে চুপিচুপি দেখা করা, আর বইয়ের পাতায় প্রেমপত্র লুকিয়ে রাখা।
কিন্তু বাস্তব কখনো কখনো গল্পকে বদলে দেয়।
নিলয়ের বাবা ছিলেন একজন সাধারণ চাকরিজীবী। সংসারের হাল ধরতে নিলয় পড়াশোনার পাশাপাশি চাকরিও করত। ওর স্বপ্ন ছিল—শামিমাকে সুন্দর একটি জীবন দেবে, নিজের হাতের গড়া ঘরে। কিন্তু স্বপ্ন আর বাস্তবের মাঝে অনেক ফারাক।
শামিমার পরিবার বরাবরই ছিল রক্ষণশীল। বাবা ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা। তিনি মেয়ের জন্য বড় পরিবারের বর খুঁজছিলেন। শামিমার মা যদিও জানতেন মেয়ের মনের কথা, তবুও সমাজের চোখে মেয়ের ‘ভবিষ্যৎ’ বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল তাদের কাছে।
একদিন শামিমা জানল, তার বিয়ে ঠিক হয়েছে—চট্টগ্রামের এক প্রভাবশালী পরিবারের ছেলে, ব্যবসায়ী। ছেলে ভালো, শিক্ষিত, ধনী—সবদিক দিয়ে ‘পারফেক্ট’। কিন্তু একটাই সমস্যা, সে নিলয় নয়।
সে রাত শামিমা কাটিয়েছিল চোখের জলে। পরদিন সকালে ছাদে দেখা করল নিলয়ের সঙ্গে। দীর্ঘদিনের সম্পর্কের সবচেয়ে ছোট কিন্তু সবচেয়ে ভারী কথোপকথন ছিল সেটা।
— “তুই কিছু বলবি না, নিলয়?” শামিমা বলল।
— “কি বলব? তোর মুখে হাসি দেখতে চাই। কিন্তু আমি জানি, ওই হাসি আমি দিতে পারব না।”
— “তুই তো জানিস, আমি তোর ছাড়া কিছু ভাবতেই পারি না...”
— “তাহলে পালিয়ে যাই?” হেসে বলল নিলয়। কিন্তু সে হাসির পেছনে ছিল অসহায়তা।
শামিমা তাকিয়ে ছিল ওর চোখে। কিছু বলার ছিল, কিন্তু ভাষা ছিল না। শুধু চোখ দুটোয় ছিল একটাই প্রশ্ন—“কেন?” নিলয় বুঝেছিল, শামিমা পালিয়ে যাবার মেয়ে নয়। ও জানত, শামিমা পরিবারকে কাঁদিয়ে নিজের সুখ খুঁজবে না।
শেষ পর্যন্ত শামিমা বিয়ে করল। চট্টগ্রামে চলে গেল। নতুন জীবন, নতুন মানুষ, নতুন শহর। নিলয় পড়াশোনা শেষ করে ঢাকাতেই থেকে গেল। ব্যস্ত হয়ে পড়ল নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে। কিন্তু শামিমার মতো সে নিজের মনকে নতুন কিছুতে ব্যস্ত করতে পারল না।
তিন বছর পর, হঠাৎ একদিন ফেসবুকে নিলয়ের ইনবক্সে একটা মেসেজ এলো—“কেমন আছো?”
নাম—শামিমা।
হৃদয় যেন মুহূর্তে থমকে গেল। অনেকক্ষণ খোলা চ্যাটবক্সের দিকে তাকিয়ে থাকল। অবশেষে উত্তর দিল, “ভালো।
তুমি?”
তারপর চলল কিছুক্ষণ কথোপকথন। ছোট ছোট কথা—আবহাওয়ার মতো। কিন্তু প্রতিটি লাইনের পেছনে ছিল চাপা অভিমান, অনুশোচনা, আর অজস্র না বলা কথা।
একদিন, শামিমা হঠাৎ জানাল—তার স্বামী এখন বিদেশে, ও একা থাকে। তখনও কোনো অভিযোগ ছিল না তার গলায়, কেবল বলেছিল, “তুই থাকলে বুঝতিস, একা থাকাটা কত কষ্টের।”
নিলয়ের বুকের ভেতর কেমন জানি মোচড় দিল। কিন্তু সে কিছু বলল না। শুধু একবার বলল, “আমরা যদি একটু সাহসী হতাম, তাহলে হয়তো গল্পটা অন্যরকম হতো।”
সেই রাতে নিলয় জানত, সে এখনও শামিমাকে ভালোবাসে। আর শামিমা? সে তো কোনদিনই ভালোবাসা থেকে সরে আসেনি। শুধু সময় আর সমাজ তাকে নিয়ে গেছে এক অচেনা পথে।
কয়েক মাস পর, শামিমা একদিন জানাল—ওর স্বামী ডিভোর্স চায়। কারণ, সে নাকি ওর মধ্যে ভালোবাসা খুঁজে পায় না। শামিমা তখন শুধু বলেছিল, “ভালোবাসা তো আমি অনেক আগেই দিয়ে ফেলেছি, যার নাম নিলয়।”
নিলয় বুঝল, ভালোবাসা ফিরে আসলেও, পুরোনো ক্ষত সহজে মেলে না। সে শামিমাকে বোঝাল—“তুই আবার নতুন করে জীবন শুরু করতে পারিস। আমি চাই, তুই আবার হাসিস। কিন্তু আমার কাছে ফিরে আসা মানে তোর পুরোনো কষ্ট নিয়ে ফিরে আসা। আমি চাই না, তোর চোখের জল আর একবার আমার জন্য পড়ুক।”
শামিমা শুধু বলল, “তুই চাইলেও আমি তো আর কারো হতে পারি না। আমার ভালোবাসা আজও তোর নামেই লেখা।”
বছর ঘুরে যায়।
একদিন হঠাৎ খবর এলো—শামিমা মারা গেছে। হার্ট অ্যাটাক। মাত্র ৩১ বছর বয়সে।
নিলয় খবরটা পেয়ে চুপ করে গিয়েছিল। কাউকে কিছু বলেনি। শুধু একা ছাদে গিয়ে বসেছিল সেই জায়গায়, যেখানে একদিন শামিমা বলেছিল, “তুই কিছু বলবি না, নিলয়?”
সে শুধু ফিসফিস করে বলেছিল, “আজ আমি বলতে এসেছি, শামিমা—আমি তোকে ভালোবাসি। সবসময় ভালোবেসে যাবো।”
তারপর চোখ দুটো অশ্রুতে ভিজে গিয়েছিল। বৃষ্টি পড়ছিল, যেন আকাশও কাঁদছিল ওদের অপূর্ণ প্রেমের জন্য।
শামিমা ছিল শান্ত স্বভাবের, চোখে স্বপ্নভরা। আর নিলয়, সদা হাস্যোজ্জ্বল, কিন্তু ভেতরে ছিল গভীরতা। ওদের প্রেমটা যেন সিনেমার মতো ছিল—একসাথে বৃষ্টিতে ভিজে যাওয়া, ছাদে চুপিচুপি দেখা করা, আর বইয়ের পাতায় প্রেমপত্র লুকিয়ে রাখা।
কিন্তু বাস্তব কখনো কখনো গল্পকে বদলে দেয়।
নিলয়ের বাবা ছিলেন একজন সাধারণ চাকরিজীবী। সংসারের হাল ধরতে নিলয় পড়াশোনার পাশাপাশি চাকরিও করত। ওর স্বপ্ন ছিল—শামিমাকে সুন্দর একটি জীবন দেবে, নিজের হাতের গড়া ঘরে। কিন্তু স্বপ্ন আর বাস্তবের মাঝে অনেক ফারাক।
শামিমার পরিবার বরাবরই ছিল রক্ষণশীল। বাবা ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা। তিনি মেয়ের জন্য বড় পরিবারের বর খুঁজছিলেন। শামিমার মা যদিও জানতেন মেয়ের মনের কথা, তবুও সমাজের চোখে মেয়ের ‘ভবিষ্যৎ’ বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল তাদের কাছে।
একদিন শামিমা জানল, তার বিয়ে ঠিক হয়েছে—চট্টগ্রামের এক প্রভাবশালী পরিবারের ছেলে, ব্যবসায়ী। ছেলে ভালো, শিক্ষিত, ধনী—সবদিক দিয়ে ‘পারফেক্ট’। কিন্তু একটাই সমস্যা, সে নিলয় নয়।
সে রাত শামিমা কাটিয়েছিল চোখের জলে। পরদিন সকালে ছাদে দেখা করল নিলয়ের সঙ্গে। দীর্ঘদিনের সম্পর্কের সবচেয়ে ছোট কিন্তু সবচেয়ে ভারী কথোপকথন ছিল সেটা।
— “তুই কিছু বলবি না, নিলয়?” শামিমা বলল।
— “কি বলব? তোর মুখে হাসি দেখতে চাই। কিন্তু আমি জানি, ওই হাসি আমি দিতে পারব না।”
— “তুই তো জানিস, আমি তোর ছাড়া কিছু ভাবতেই পারি না...”
— “তাহলে পালিয়ে যাই?” হেসে বলল নিলয়। কিন্তু সে হাসির পেছনে ছিল অসহায়তা।
শামিমা তাকিয়ে ছিল ওর চোখে। কিছু বলার ছিল, কিন্তু ভাষা ছিল না। শুধু চোখ দুটোয় ছিল একটাই প্রশ্ন—“কেন?” নিলয় বুঝেছিল, শামিমা পালিয়ে যাবার মেয়ে নয়। ও জানত, শামিমা পরিবারকে কাঁদিয়ে নিজের সুখ খুঁজবে না।
শেষ পর্যন্ত শামিমা বিয়ে করল। চট্টগ্রামে চলে গেল। নতুন জীবন, নতুন মানুষ, নতুন শহর। নিলয় পড়াশোনা শেষ করে ঢাকাতেই থেকে গেল। ব্যস্ত হয়ে পড়ল নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে। কিন্তু শামিমার মতো সে নিজের মনকে নতুন কিছুতে ব্যস্ত করতে পারল না।
তিন বছর পর, হঠাৎ একদিন ফেসবুকে নিলয়ের ইনবক্সে একটা মেসেজ এলো—“কেমন আছো?”
নাম—শামিমা।
হৃদয় যেন মুহূর্তে থমকে গেল। অনেকক্ষণ খোলা চ্যাটবক্সের দিকে তাকিয়ে থাকল। অবশেষে উত্তর দিল, “ভালো।
তুমি?”
তারপর চলল কিছুক্ষণ কথোপকথন। ছোট ছোট কথা—আবহাওয়ার মতো। কিন্তু প্রতিটি লাইনের পেছনে ছিল চাপা অভিমান, অনুশোচনা, আর অজস্র না বলা কথা।
একদিন, শামিমা হঠাৎ জানাল—তার স্বামী এখন বিদেশে, ও একা থাকে। তখনও কোনো অভিযোগ ছিল না তার গলায়, কেবল বলেছিল, “তুই থাকলে বুঝতিস, একা থাকাটা কত কষ্টের।”
নিলয়ের বুকের ভেতর কেমন জানি মোচড় দিল। কিন্তু সে কিছু বলল না। শুধু একবার বলল, “আমরা যদি একটু সাহসী হতাম, তাহলে হয়তো গল্পটা অন্যরকম হতো।”
সেই রাতে নিলয় জানত, সে এখনও শামিমাকে ভালোবাসে। আর শামিমা? সে তো কোনদিনই ভালোবাসা থেকে সরে আসেনি। শুধু সময় আর সমাজ তাকে নিয়ে গেছে এক অচেনা পথে।
কয়েক মাস পর, শামিমা একদিন জানাল—ওর স্বামী ডিভোর্স চায়। কারণ, সে নাকি ওর মধ্যে ভালোবাসা খুঁজে পায় না। শামিমা তখন শুধু বলেছিল, “ভালোবাসা তো আমি অনেক আগেই দিয়ে ফেলেছি, যার নাম নিলয়।”
নিলয় বুঝল, ভালোবাসা ফিরে আসলেও, পুরোনো ক্ষত সহজে মেলে না। সে শামিমাকে বোঝাল—“তুই আবার নতুন করে জীবন শুরু করতে পারিস। আমি চাই, তুই আবার হাসিস। কিন্তু আমার কাছে ফিরে আসা মানে তোর পুরোনো কষ্ট নিয়ে ফিরে আসা। আমি চাই না, তোর চোখের জল আর একবার আমার জন্য পড়ুক।”
শামিমা শুধু বলল, “তুই চাইলেও আমি তো আর কারো হতে পারি না। আমার ভালোবাসা আজও তোর নামেই লেখা।”
বছর ঘুরে যায়।
একদিন হঠাৎ খবর এলো—শামিমা মারা গেছে। হার্ট অ্যাটাক। মাত্র ৩১ বছর বয়সে।
নিলয় খবরটা পেয়ে চুপ করে গিয়েছিল। কাউকে কিছু বলেনি। শুধু একা ছাদে গিয়ে বসেছিল সেই জায়গায়, যেখানে একদিন শামিমা বলেছিল, “তুই কিছু বলবি না, নিলয়?”
সে শুধু ফিসফিস করে বলেছিল, “আজ আমি বলতে এসেছি, শামিমা—আমি তোকে ভালোবাসি। সবসময় ভালোবেসে যাবো।”
তারপর চোখ দুটো অশ্রুতে ভিজে গিয়েছিল। বৃষ্টি পড়ছিল, যেন আকাশও কাঁদছিল ওদের অপূর্ণ প্রেমের জন্য।
Post a Comment